পাণ্ডা প্রচলন

অনঙ্গভীমদেবের সময়েই পাণ্ডা ব্যবস্থার শুরু শ্রীপুরুষোত্তম মন্দিরে। অনঙ্গভীমদেব ৩য় যে পাণ্ডা ব্যবস্থার প্রচলন করেন তার পিছনে দু-একটি কারণ রয়েছে। মানুষের মধ্যে ধর্মপ্রচারই একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল না শ্রীজগন্নাথ মন্দিরের পাণ্ডাদের। রাজার জন্য কূটনৈতিক কাজকর্মও করতেন তাঁরা। প্রথমত, শত্রুদের গতিবিধি সম্বন্ধে নানা অজানা তথ্য অত্যন্ত গোপনে সংগ্রহ করতেন পাণ্ডারা। এবং সেগুলো যথাসময়ে রাজাকে জানাতেন। দ্বিতীয়, শ্রীক্ষেত্র দর্শন করার জন্য তীর্থযাত্রীদের আকর্ষণ করতেন। পাণ্ডাদের যজমানরা বিভিন্ন ভাষাভাষী। সারা ভারতবর্ষ থেকে পুরীতে আসা তীর্থযাত্রীদের বিভিন্ন ভাষা পাণ্ডাদের অনেকেই ধীরে ধীরে আয়ত্ত করে ফেলতেন। বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের মধ্যে একটা সেতুবন্ধনের কাজ করতেন এই পাণ্ডারা। সেদিক থেকে সমস্ত ভারতবর্ষব্যাপী ধর্মীয় ঐক্য গড়ে তোলার ক্ষেত্রে পুরীর পাণ্ডাদের অবশ্যই একটা ভূমিকা ছিল। তবে এ কথাও ঠিক, শ্রীজগন্নাথদেবের প্রতি আপামর হিন্দুর অটুট বিশ্বাস ও আনুগত্যের সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণীর পাণ্ডা এই বিশ্বাস ও আনুগত্যকে নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগিয়েছেন। ধর্মের নাম করে অধর্মকেই দিনের পর দিন প্রশ্রয় দিয়েছেন তাঁরা। পাণ্ডাদের প্রয়োজনাতীত সংখ্যাবৃদ্ধি ও জীবনযাপনের কঠিনতাও এর কারণ।

 

বঙ্গদেশের মুসলমান রাজাদের সঙ্গে যুদ্ধে উড়িষ্যার গজপতি রাজাদের শক্তির প্রধান উৎস হয়ে ওঠেন পুরীর শ্রীজগন্নাথ মন্দিরের পাণ্ডারা। গুপ্তচরবৃত্তিতে এঁরা ছিলেন রীতিমতো ওস্তাদ। সারা ভারতবর্ষ ঘুরে পাণ্ডারা তথ্যসংগ্রহ করতেন। ভানুদেব ২য়-র নাতি ভানুদেব ৩য়-যে দিল্লির ক্ষমতাশালী সুলতান ফিরোজশাহ তুঘলকে পরাজিত করেছিলেন তার পিছনে পাণ্ডাদের অবদান অনেক। ফিরোজশাহ তুঘলকের সেনাদের গতিবিধির প্রয়োজনীয় তথ্য ভানুদেব ৩য়কে দিয়েছিলেন পাণ্ডারা। সারা ভারতে শ্রীজগন্নাথদেবের দূত হিসেবে ঘুরে বেড়ানোর ক্ষেত্রে পাণ্ডাদের কোনও অসুবিধে হত না। তবে হিন্দুদের মধ্যে পারস্পারিক বিশ্বাসঘাতকতা ও শত্রুতা ক্রমশ তাদের দুর্বল করে তোলে। এই সুযোগে ফিরোজশাহ তুঘলকও দ্বিতীয়বার উড়িষ্যার উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং সফল হন।